ডেস্ক নিউজ : বিয়ের পর স্বপ্নের মতোই যাচ্ছিল স্বপ্নার দিনগুলো। স্বামী-সংসার নিয়ে সুখী পরিবার তার। পরিবারের অমতে নিজের পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করে এতটুকু ভুল করেননি এমনটি ভাবতেন স্বপ্না।
একটি বেসরকারি মেডিকেলে ৩য় বর্ষে পড়ার সময় স্বপ্না ভালোবেসে বিয়ে করেন রিপনকে। একটি বেসরকারি এয়ারলাইন্সে চাকরি করেন রিপন। মা-বাবার ইচ্ছে ছিল স্বপ্নাকে ডাক্তারের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার।
এ কারণে স্বপ্নার এ বিয়েতে মত ছিল না তাদের। বিয়ের পর ভালো আছে দেখে স্বপ্নার পরিবার মেনে নিয়েছিল রিপনকে। বিয়ের দেড় বছর পর স্বপ্নার কোল জুড়ে আসে ফুটফুটে কন্যা সন্তান। সন্তান জন্ম নেবার কিছুদিন পর থেকেই বদলে যেতে থাকে রিপন। রাত করে বাড়ি ফেরেন। বাসায় যতক্ষণ সময় থাকেন ফোনে কথা বলা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। কার সঙ্গে কথা বলো স্বপ্না জানতে চাইলে রিপন বলতেন অফিসের ফোন। এভাবে বেশ কিছুদিন চলতে থাকে। একদিন স্বপ্না রিপনের মোবাইল চেক করলে কল লিস্টে একটি মেয়ের নম্বর দেখতে পান। এই মেয়ের নম্বরে একাধিক বার ডায়াল করেছেন রিপন। সেদিনেই মনে সন্দেহের দানা বাঁধে স্বপ্নার।
পরে স্বপ্না রিপনের অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন এক বিমানবালার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে গেছেন রিপন। স্বপ্না কিছুতেই মানতে পারছিলেন না বিষয়টি। এক মুহূর্তে স্বপ্নার জীবন এলোমেলো করে দিয়েছে রিপনের পরকীয়ার সম্পর্ক। এ শুধু একজন স্বপ্নার গল্প নয়। প্রতিদিন এরকম অনেক নারীর স্বপ্ন ভাঙছে পরকীয়ার কারণে। সমাজে পরকীয়া সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাতেমা রেজিনা পারভিন বলেন, পরকীয়া কোনো বৈধ সম্পর্ক নয়। পরকীয়া সমাজের জন্য ক্ষতিকর। পরকীয়া এমন এক ব্যাধি যা স্বামী-স্ত্রীর আস্থার সম্পর্ককে নষ্ট করে দেয়। মানুষের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের বাইরে গিয়েও মানুষ অন্য সম্পর্ক তৈরি করছে।
পরকীয়া বাড়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে, মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির অবাধ পদচারণা। ভারতীয় চ্যানেলগুলোতে যে সিরিয়ালগুলো প্রচার হচ্ছে সেগুলোতে পরকীয়া বেশি দেখানো হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে মানুষের জীবনে। স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের উপর বিশ্বাস কমে যাচ্ছে। স্বামী-স্ত্রীর বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে একজন আরেকজনের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার যে অঙ্গীকার করে পরকীয়া সেই নৈতিকতাকে নষ্ট করে দেয়। সমাজে ডিভোর্স বেড়ে যাওয়ার আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে পরকীয়া।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৭ সালে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলে অভিযোগ পড়েছে ৯৩১টি। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের একজন শুনানি কর্মকর্তা বলেন আমাদের এখানে নারী নির্যাতনের যত অভিযোগ আসে তার মধ্যে বেশির ভাগই স্বামীর পরকীয়ার অভিযোগ। উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত সব স্তরেই পরকীয়া বেড়ে গেছে। দেখা যায় স্ত্রী তার স্বামীর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ করেছে। কিন্তু শোনানিতে এসে স্বামী তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ করছে।
নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল সব সময় নারীদের সহায়তা দিয়ে থাকে। স্ত্রী যদি স্বামীর ঘর করতে না চায় সেক্ষেত্রে দেনমোহর আদায় এবং সন্তানদের ভরণপোষণ আদায়সহ সব রকমের আইনি সহায়তা দেয় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-